Header Ads

Header ADS

অহি-র প্রকারভেদ

অহি নযিল হওয়ার বিভিন্ন মাধ্যম
অহি-র প্রকারভেদ

আল্লাহ কিভাবে ‘অহি' প্রেরণ করেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের জন্য এটি অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন অহি-র মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতীত, যে তার অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়' (সূরা ৪২/৫১)। হাফেয ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) নবীদের নিকটে ‘অহি' প্রেরণের সাতটি প্রকারভেদ বর্ণনা করেছেন। যেমন:-

(১) সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। যা রাসূল (ছাঃ) ৪০ বছর বয়সে রবীউল আউয়াল মাস থেকে রামাযান মাস পর্যন্ত প্রথম ছয়মাস প্রাপ্ত হয়েছিলেন। যা প্রভাত সূর্যের ন্যায় সত্য হয়ে দেখা দিত (বুখারী হা/৩)।

(২) অদৃশ্য থেকে হৃদয়ে অহি-র প্রক্ষেপণ, যা জিব্রীল মাঝেমধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে করতেন।”

(৩) মানুষের রূপ ধারণ করে জিব্রীলের আগমন। যেমন একবার দেহিয়াতুল কালবীর রূপ ধারণ করে ছাহাবীগণের মজলিসে এসে তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে ইসলাম, ঈমান, ইহসান ও কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা দেন। যাকে 'হাদীছে জিব্রীল' বলা হয়।

(৪) কখনাে ঘণ্টাধ্বনির আওয়ায করে ‘অহি' নাযিল হ'ত। এ সময় রাসূল (ছাঃ) খুব কষ্ট অনুভব করতেন। প্রচণ্ড শীতের দিনেও দেহে ঘাম ঝরত (বুখারী হা/২)। উটের পিঠে থাকলে অধিক ভার বহনে অক্ষম হয়ে উট বসে পড়ত (হাকেম হা/৩৮৬৫)। রাসূল (ছাঃ)-এর উরুর চাপে একবার এ অবস্থায় যায়েদ বিন ছাবিতের উরুর হাড় ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হয়েছিল (বুখারী হা/২৮৩২)।

(৫) জিব্রীল (আঃ) স্বরূপে এসে ‘অহি' প্রদান করতেন। এটি দু’বার ঘটেছে। যেমন সূরা নাজমে (৫-১৪) বর্ণিত হয়েছে।

(৬) সরাসরি আল্লাহর ‘অহি'। যেমন মেরাজ রজনীতে সিদরাতুল মুনতাহায় অবস্থানকালে পর্দার অন্তরাল থেকে আল্লাহ সরাসরি অহি-র মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেন।

(৭) ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই দুনিয়াতে আল্লাহ পর্দার অন্তরাল থেকে স্বীয় নবীর সঙ্গে কথা বলেন। যেমন মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে তুর পাহাড়ে তিনি কথা বলেছিলেন (ত্বোয়াহা ২০/১১২৩; নিসা ৪/১৬৪)। অনেকে অষ্টম আরেকটি ধারা বলেছেন যে, কোনরূপ পর্দা ছাড়াই দুনিয়াতে আল্লাহ তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। এটি প্রমাণিত নয়।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ 

১. সর্বপ্রথম নাযিলকৃত সূরা আলাকুের প্রথম পাঁচটি আয়াতে পড়া ও লেখা এবং তার মাধ্যমে এমন জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উভয় জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করে। আর সেটাই হ’ল প্রকৃত মানবীয় শিক্ষা।


 ২. আলাকৃ-এর চাহিদা পূরণে গৃহীত বস্তুগত শিক্ষা যেন মানুষকে তার খালেক-এর | সন্ধান দেয় এবং তার প্রতি দাসত্ব, আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করে, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।


 ৩. সসীম মানবীয় জ্ঞানের সাথে অসীম এলাহী জ্ঞানের হেদায়াত যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ কখনােই প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারে না এবং সে কখনােই প্রকৃত সত্য খুঁজে পাবে না- সেকথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিশক্তির সাথে চশমা, অনুবীক্ষণ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র যুক্ত হলে তার দৃষ্টিসীমা প্রসারিত হয়। বলা বাহুল্য তাওহীদের জ্ঞান অর্জনের আহ্বানই ছিল মানবজাতির প্রতি কুরআনের সর্বপ্রথম আহ্বান।


৪. কয়েকদিনের বিরতির পর সূরা মুদ্দাছছিরে নাযিলকৃত পাঁচটি আয়াতে পূর্বোক্ত অভ্রান্ত জ্ঞানের তথা তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে এক অপূর্ব অলংকারসমৃদ্ধ ভাষায় । উঠো! ভােগবাদী মানুষকে শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচাও। সর্বত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কর। শিরকী জাহেলিয়াতের কলুষময় পােষাক ঝেড়ে ফেল এবং সকল অপবিত্রতা হতে মুক্ত হও। অর্থাৎ মানুষের মনােজগতে ও কর্মজগতে আমূল সংস্কার সাধনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে হে চাদরাবৃত মুহাম্মাদ! উঠে দাঁড়াও!!


৫. যার পরপরই একই দরদভরা ভাষায় সূরা মুযযাম্মিল নাযিল করে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের জন্য তাহাজ্জুদ ছালাত তথা নৈশ ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয় (মুযযাম্মিল ৭৩/১-৪)। কেননা পরবর্তী সমাজ বিপ্লবের গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন মানুষ তৈরী করাই ছিল প্রধান কাজ। আর আধ্যাত্মিক মানস গঠনে তাহাজ্জুদ ছালাতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।


৬. দুনিয়াপূজারী অধঃপতিত জাতিকে উদ্ধারের যে পথ মুহাম্মাদ (ছাঃ) তালাশ করছিলেন, তা তিনি পেয়ে গেলেন আল্লাহর অহি-র মাধ্যমে। আর তা হল জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন। অর্থাৎ দুনিয়াপূজারী মানুষকে আল্লাহমুখী করা এবং সার্বিক জীবনে অহি-র বিধান অনুসরণের মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তিই হবে মানুষের পার্থিব জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। অন্য কোন পথে মানবতার মুক্তি নেই।



৭. সসীম জ্ঞানের উর্ধ্বে অসীম জ্ঞানের উৎস আল্লাহর সন্ধান পাওয়াই ছিল প্রথম নুযুলে অহি-র অমূল্য অবদান।

ইকবাল বলেন

(১) আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, সে শিক্ষা হ’ল ফিনা।

(২) সম্পদ, সন্তান এমনকি জাগীরও ফিত্রা।

(৩) অসত্যের জন্য যদি তরবারি ওঠে, তবে সেটিও ফিত্রা।

(৪) তরবারি কিসের, নারায়ে তাকবীরও ফিত্রা।

No comments

Powered by Blogger.