|
হিলফুল ফুযুল
|
হিলফুল ফুযুল
ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখে দয়াশীল মুহাম্মাদের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া হয়। যাতে ভবিষ্যতে এরূপ ধ্বংসলীলা আর না ঘটে, সেজন্য তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হন। এই সময় হঠাৎ একটি ঘটনা ঘটে যায়। যুবায়েদ গােত্রের জনৈক ব্যক্তি ব্যবসা উপলক্ষে মক্কায় এসে অন্যতম কুরায়েশ নেতা ‘আছ বিন ওয়ায়েল-এর নিকটে মালামাল বিক্রয় করেন। কিন্তু তিনি মূল্য পরিশােধ না করে মাল আটকে রাখেন। তখন লােকটি অন্য নেতাদের কাছে সাহায্য চাইলে কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে তিনি ভােরে আবু কুবায়েস পাহাড়ে উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে উচ্চকণ্ঠে হৃদয় বিদারক কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন।
রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা যুবায়ের বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এই আওয়ায শুনে ছুটে যান এবং ঘটনা অবহিত হয়ে তিনি অন্যান্য গােত্র প্রধানদের নিকটে গমন করেন। অতঃপর তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ বিন জুদ'আন তায়ীর গৃহে গােত্রপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে রাসূল (ছাঃ)-এর দাদা ও নানার গােত্র সহ পাঁচটি গােত্র যােগদান করে। তারা হ’ল বনু হাশেম, বনু মুত্ত্বালিব, বনু আসাদ, বনু যােহর ও বনু তাইম বিন মুররাহ।
উক্ত বৈঠকে তরুণ মুহাম্মাদ কতগুলি কল্যাণমূলক প্রস্তাব পেশ করেন, যা নেতৃবৃন্দের প্রশংসা অর্জন করে। অতঃপর চাচা যুবায়েরের দৃঢ় সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে চারটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। মূলতঃ ভাতিজা মুহাম্মাদ ছিলেন উক্ত কল্যাণচিন্তার উদ্ভাবক এবং পিতৃব্য যােবায়ের ছিলেন তার প্রথম ও প্রধান সমর্থক। চুক্তিগুলি ছিল নিম্নরূপ :
(১) আমরা সমাজ থেকে অশান্তি দূর করব
(২) মুসাফিরদের হেফাযত করব
(৩) দুর্বল ও গরীবদের সাহায্য করব এবং
(৪) যালেমদের প্রতিরােধ করব।
হারবুল ফিজারের পরে যুলক্বা'দাহর ‘হারাম’ মাসে আল্লাহর নামে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি সম্পাদনের পরপরই তারা ‘আছ বিন ওয়ায়েল-এর নিকট যান এবং তার কাছ থেকে উক্ত মযলুম যুবায়দী ব্যবসায়ীর প্রাপ্য হক বুঝে দেন। এরপর থেকে সারা মক্কায় শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে এবং কুরাইশগণ এই কল্যাণকামী সংগঠনকে ‘হিলফুল ফুযূল’ বা কল্যাণকামীদের সংঘ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
একে পবিত্ৰাত্মাদের সংঘ' বলেও অভিহিত করা হয়েছে (আহমাদ হা/১৬৫৫)। অথচ ইতিপূর্বে নিয়ম ছিল গােত্রীয় বা দলীয় কোন ব্যক্তি শত অন্যায় করলেও তাকে পুরা গােত্র মিলে সমর্থন ও সহযােগিতা করতেই হ'ত। যেমন আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে ন্যায়-অন্যায় বাছ-বিচার ছাড়াই দলীয় ব্যক্তির সমর্থনে নেতা-কর্মীরা করে থাকেন। | এমনকি আদালতও প্রভাবিত হয়।
হিলফুল ফুযূল-এর গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমি আমার চাচাদের সঙ্গে হিলফুল ফুযূলে অংশগ্রহণ করি, যখন আমি বালক ছিলাম। অতএব আমি মূল্যবান লাল উটের বিনিময়েও উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করতে রাযী নই' (আহমাদ হা/১৬৫৫, ১৬৭৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯০০)।
৭১. ড. আকরাম যিয়া উমারী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১৪-১৭। ৭২. ইবনু হিশাম ১/১৩৩-৩৪; সীরাহ ছহীহাহ ১/১১১-১১২।
Hilful Fuul
Seeing the horrors of the battle of Fiza with his own eyes, the compassionate Muhammad had a great reaction in his mind. He was deeply concerned that such a catastrophe would not happen again in the future. This time an incident happened suddenly. A man from Zubaydah came to Makkah on business and sold goods to one of the Quraish leaders, As bin Wael. But he withheld the goods without paying the price. At that time, when Lake asked other leaders for help, no one came forward. As a result, he climbed the Vare Abu Qubayes hill and recited heartbreaking poems aloud to everyone.
Bin Abdul Muttalib, the uncle of the Prophet (sm) Zubayr, on hearing this, ran away and after being informed of the incident, he went to the other Gaetra chiefs. He then held a meeting with the Gaetrapradhans at the house of Abdullah bin Jud'an Tayyar, a respected veteran leader. In that meeting, five gaetras including the gaetra of the grandfather and grandfather of the Prophet (sm) were offered. They are Banu Hashem, Banu Muttalib, Banu Asad, Banu Zahir and Banu Taym bin Murrah.
At that meeting, the young Muhammad made a number of welfare proposals, which were praised by the leaders. Then, with the strong support of Uncle Jubayer, four proposals were unanimously adopted. Originally, his nephew Muhammad was the inventor of the welfare state and his cousin Jabayer was his first and foremost supporter. The agreements were as follows:
(1) We will remove unrest from the society
(2) I will take care of the travelers
(3) We will help the weak and the poor and
(4) I will resist the wrongdoers.
This covenant was executed in the name of Allah in the ‘Haram’ month of Zulqa’dah after Harbul Fizer. Immediately after the execution of this agreement, they went to ‘As bin Wael and from him understood the rights due to the oppressed Zubaydi trader. From then on, the air of peace spread throughout Makkah and the Quraish called this charitable organization 'Hilful Fuul' or 'Association of Philanthropists'.
It has also been termed as 'Association of the Holy Spirit' (Ahmad H / 1755). But in the past, the rule was that even if a person of Gatri or party committed a hundred wrongs, he had to support and cooperate with the whole Gatri. As in modern democratic society, the leaders and workers do it in support of the party person without any injustice. | Even the courts are affected.
Regarding the importance of Hilful Fuul, Rasulullah (sm) said, I used to participate in Hilful Fuul with my uncles when I was a boy. Therefore, I am not willing to break the agreement even in exchange for the precious red camel '(Ahmad H / 1855, 17; Silsila Sahihah H / 1900).
No comments