নবীজীর দু’টি দাওয়াত দু’টি আনুগত্যের প্রতি
দু’টি দাওয়াত দু’টি আনুগত্যের প্রতিহযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দু’টি দাওয়াত দু’টি আনুগত্যের প্রতি
মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর চাচা কুরায়েশ নেতা আবু লাহাবের দু’টি দাওয়াত ছিল দু’টি আনুগত্যের প্রতি ও দু’টি সার্বভৌমত্বের প্রতি দাওয়াত। দু’টি ছিল সম্পূর্ণ পরস্পর বিরােধী দাওয়াত।
একটিতে ছিল আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান। অন্যটিতে ছিল মানুষের সার্বভৌমত্বের অধীনে মানুষ মানুষের গােলাম । নিমের হাদীছ দুটি তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ।-
‘মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির বলেন, তিনি রাবীআহ বিন এবাদ আদ-দুআলী-কে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মদীনায় হিজরতের পূর্বে মিনাতে লােকদের তাবু সমূহে গিয়ে বলতে শুনেছি, হে লােকসকল! আল্লাহ তােমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তােমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করাে না। রাবী বলেন, এ সময় তার পিছনে আর একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম, হে লােকসকল! নিশ্চয় এই ব্যক্তি তােমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তােমরা তােমাদের বাপ-দাদার ধর্ম।
পরিত্যাগ কর। রাবী বলেন, আমি লােকদের জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যক্তিটি কে? তারা বলল, আবু লাহাব’ (হাকেম হা/৩৮, হাদীছ ছহীহ)। একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাহেলী যুগে আমি রাসূল (ছাঃ)-কে যুল-মাজায বাজারে লােকদের উদ্দেশ্যে বার বার বলতে শুনেছি, তােমরা বল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাহলে তােমরা সফলকাম হবে।
তাঁর পিছে পিছে আর একজন চোখ ট্যারা, দুই ঝুটি চুল ওয়ালা উজ্জ্বল গৌর বর্ণের ব্যক্তি বলছেন, লােকটি ধর্মত্যাগী ও মিথ্যাবাদী’ । আমি লােকদের জিজ্ঞেস করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? লােকেরা বলল, উনার চাচা আবু লাহাব'।
ত্বারেক আল-মাহারেবী বলেন, আমি জাহেলী যুগে যুল-মাজায় বাজারে লাল জুব্বা।পরিহিত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-কে দাওয়াত দিতে শুনেছি যে, হে জনগণ! তােমরা বল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
তাহলে তােমরা সফলকাম হবে। তাঁর পিছে পিছে একজন লােককে তাঁর পায়ে পাথর ছুঁড়ে মারতে দেখলাম। যা তাঁর দুই গোঁড়ালী ও গোড়ালীর উপরাংশ রক্তাক্ত করে দিচ্ছে। আর সে বলছে, হে জনগণ! তােমর এর আনুগত্য করাে না। কারণ সে মহা মিথ্যাবাদী’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫৯)।
ভাতিজা ও চাচার দ্বিমুখী দাওয়াত, দ্বিমুখী সার্বভৌমত্বের ও দ্বিমুখী আনুগত্যের প্রতি দাওয়াত। যা সদা সাংঘর্ষিক। কিয়ামত পর্যন্ত সত্য ও মিথ্যার এই দ্বন্দ্ব চলবে। জান্নাত পিয়াসী মানুষ সর্বদা সত্যের উপাসী হবে ও পরকালে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। আর প্রকৃত প্রস্তাবে তারাই হ’ল ইহকালে ও পরকালে সফলকাম।
বর্তমান যুগে মুসলমানদের মধ্যে কুরায়েশদের ন্যায় তাওহীদের দাবী আছে। কিন্তু বাস্তবে নেই। যাকে ‘তাওহীদে রুবুবিয়াত' বলা হয়। অর্থাৎ রব হিসাবে আল্লাহকে স্বীকার করা। পক্ষান্তরে রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াত ছিল জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করা।
যাকে ‘তাওহীদে ইবাদাত’ বা ‘উলুহিয়াত' বলা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবলমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫১/৫৬)। কুরায়েশদের মধ্যে আল্লাহ্র স্বীকৃতি ছিল। কিন্তু আল্লাহর ইবাদত ছিল না এবং তাদের সার্বিক জীবনে আল্লাহর আনুগত্য ছিল না। এ যুগের মুসলমানদের মধ্যেও। একই অবস্থা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। অতএব জান্নাত পিয়াসী মুমিনগণ সাবধান!
হাকেম হা/৩৯, ১/১৫ পৃঃ, হানাহ হহহ, আহমাদ হা/১৬০৬৬।
হাকেম হা/৪২১৯, ২/৬১১; হহীহ ইবনু হিব্বান হা/৬৫৬২; হীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫৯,; দারাকুন্নী হা/২৯৫৭, সনদ হইহি।
No comments