Header Ads

Header ADS

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অহি-র বিরতিকাল

অহি-র বিরতিকাল

অহি-র বিরতিকাল

অরাক্কা বিন নওফালের কাছে সবকিছু শুনে নবী করীম (ছাঃ) আশা ও আশংকার দোলায় দোলায়িত হয়ে পুনরায় হেরা গুহায় ই'তেকাফে ফিরে গেলেন এবং অহি নাযিলের অপেক্ষা করতে লাগলেন। এভাবে রামাযান শেষে বাড়ী অভিমুখে রওয়ানা হলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এমন সময় আমি আসমান থেকে একটা আওয়ায শুনতে পাই। তাকিয়ে দেখি যে, সেদিনের সেই ফেরেশতা আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী এলাকায় কুরসীর উপরে বসে আছেন। আমি ভীত-বিহ্বল হয়ে মাটিতে পড়ে যাবার উপক্রম হই। অতঃপর দ্রুত বাড়ী ফিরে স্ত্রীকে বলি, আমাকে চাদর মুড়ি দাও, চাদর মুড়ি দাও। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই গুরুগম্ভীর স্বরে ‘অহি' নাযিল হল:-

(১) “হে চাদরাবৃত! (২) উঠো, মানুষকে (আল্লাহর) ভয় দেখাও, (৩) তােমার প্রভুর মাহাত্ম ঘােষণা কর, (৪) তােমার পােশাক পবিত্র রাখাে, (৫) অপবিত্রতা পরিহার কর’ (মুদ্দাছছির ৭৪/১-৫)। এরপর থেকে অহি-র অবতরণ চালু হয়ে গেল।” ২১শে রামাযানের ক্বদর রাতে প্রথম অহি নাযিলের পর থেকে এই কয়েক দিনের বিরতিকালকে বা অহি-র বিরতিকাল বলা হয়। এটি আড়াই বা তিন বছরের জন্য বা ৪০ দিনের জন্য ছিল না, যা প্রসিদ্ধ আছে। এর পরপরই রাত্রির ছালাতের নির্দেশ দিয়ে সূরা মুযযাম্মিল-এর প্রথমাংশ নাযিল হয়।


উল্লেখ্য যে, অহি-র বিরতি দু’বার হয়েছিল। প্রথম বিরতির পর সূরা মুদ্দাছছির ১-৫ আয়াত নাযিল হয়। দ্বিতীয় বিরতির পর সূরা যােহা নাযিল হয়। এই সময় দুই বা তিন দিন অহী নাযিলে বিরতি ঘটে। তাতেই মুশরিকরা বলতে থাকে মুহাম্মাদের রব তাকে ছেড়ে গেছে। তখন নাযিল হয়, ‘শপথ পূর্বাহ্নের। শপথ রাত্রির, যখন তা নিথর হয়। তােমার পালনকর্তা তােমাকে পরিত্যাগ করেননি বা তােমার উপরে বিরূপ হননি' (যুহা ৯৩/১-৫)। একই রাবী জুনদুব বিন সুফিয়ান (রাঃ) কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, অসুখের কারণে তিনি এক, দুই বা | তিনদিন তাহাজ্জুদ পড়তে পারেননি। তাতেই জনৈকা মহিলা (প্রতিবেশী আবু লাহাবের

স্ত্রী উম্মে জামীল) এসে তাঁকে বলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি মনে করি তােমার শয়তানটা তােমাকে ছেড়ে গেছে' (বুখারী হা/৪৯৫০, ৪৯৮৩)।


ইবনু ইসহাক তৃতীয় আরেকটি বিরতির কথা বলেছেন, যেখানে কাফেররা তাকে আছহাবে কাহফ, যুলক্বারনাইন ও রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি ইনশাআল্লাহ ছাড়াই পরদিন জবাব দিবেন বলেন। এতে ১৫ দিন অহি নাযিল হওয়া বন্ধ থাকে। বিষয়টি সঠিক নয়। উল্লেখ্য যে, অহি-র বিরতিকালের সময়সীমা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। তবে এর মেয়াদ কখনাে দীর্ঘ ছিল না। এটা একারণে যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্তর প্রশান্ত থাকে এবং তা অহি গ্রহণে প্রস্তুত হয়' (সীরাহ ছহীহাহ ১/১২৭-১২৮)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, অহি-র বিরতিকাল ছিল মাত্র কয়েক দিনের জন্য।


বুখারী হা/৪৯৫৩, মুসলিম হা/১৬০, মিশকাত হা/৫৮৪১ ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়, অহি-র সূচনা অনুচ্ছেদ।

 এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ফেরেশতা আসে না শয়তান আসে, তা যাচাই করার জন্য একদিন খাদীজা তাঁকে নিজের বাম উরু অতঃপর ডান উরু অতঃপর কোলের উপর বসান এবং বলেন, আপনি কি ফেরেশতাকে দেখতে পাচ্ছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন হঁ্যা। অতঃপর খাদীজা মাথার কাপড় ফেলে দিয়ে বললেন, এবার কি দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, না। তখন খাদীজা বলে উঠলেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন ও সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আল্লাহর কসম! এটি মহান ফেরেশতা। এটি কোন শয়তান নয়' (ইবনু হিশাম ১/২৩৮-৩৯; বায়হাক্বী দালায়েল, ২/১৫১)।

বর্ণনাটি যঈফ’ (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৯৭; মা শা‘আ ২৭-২৮ পৃঃ)। 

বুখারী হা/৪৯২৬; মুসলিম হা/১৬১; মিশকাত হা/৫৮৪৩।

এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, অহি-র বিরতি দীর্ঘ হতে থাকায় রাসূল (ছাঃ) খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন ও বারবার পাহাড়ের চূড়ার দিকে তাকাতে থাকেন...। ইবনু হাজার বলেন, এই কথাগুলি এবং এর পরের

কিছু কথা অন্যতম রাবী মা'মার কর্তৃক বর্ধিত (ফাতুল বারী হা/৬৯৮২-এর ব্যাখ্যা; মা শা- ‘আ ২৫ পৃঃ)।

আলােচনা দ্রষ্টব্য : আর-রাহীকৃ পৃঃ ৬৯; সীরাহ ছহীহাহ ১/১২৭, টীকা-১।

No comments

Powered by Blogger.