হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুঅত প্রাপ্তি
নবী করিম (সাঃ) এর নবুঅত প্রাপ্তি |
২১শে রামাযান সােমবার কৃদরের রাত্রি ৭ ফেরেশতা জিবরীলের আগমন হ'ল । ধ্যানমগ্ন মুহাম্মাদকে বললেন, 'পড়'। বললেন, ‘আমি পড়তে জানিনা। অতঃপর তাকে বুকে চেপে ধরলেন ও বললেন, পড়। কিন্তু একই জবাব, “পড়তে জানিনা। এভাবে তৃতীয়বারের চাপ শেষে তিনি পড়তে শুরু করলেন,
(১) “পড় তােমার প্রভুর নামে যিনি তােমাকে সৃষ্টি করেছেন’
(২) সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে’
(৩) পড় এবং তােমার প্রভু বড়ই দয়ালু
(৪) যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দান করেছেন
(৫) তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না। (আলাক ৯৬/১-৫)।
এটাই হল পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মানবজাতির প্রতি আল্লাহর প্রথম প্রত্যাদেশ। হে মানুষ! তুমি পড় এবং লেখাপড়ার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন কর। যা তােমাকে তােমার সৃষ্টিকর্তার সন্ধান দেয় এবং তাঁর প্রেরিত বিধান অনুযায়ী তােমার জীবন পরিচালনার পথ বাৎলে দেয়। কুরআনের অত্র আয়াতগুলি প্রথম নাযিল হ'লেও সংকলনের পরম্পরা অনুযায়ী তা ৯৬তম সূরার প্রথমে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই তারতীব আল্লাহর হুকুমে হয়েছে, যা অপরিবর্তনীয়। এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে।
মাত্র পাঁচটি আয়াত নাযিল হল। তারপর ফেরেশতা অদৃশ্য হয়ে গেল। প্রথম কুরআন নাযিলের এই দিনটি ছিল ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট সােমবার। ঐ সময় রাসূল (ছাঃ)এর বয়স ছিল চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন এবং সৌরবর্ষ হিসাবে ৩৯ বছর ৩ মাস ২২ দিন। উল্লেখ্য, সকল ছহীহ হাদীছে এটি প্রমাণিত যে, সর্বদা অহি নাযিল হয়েছে জাগ্রত অবস্থায়, ঘুমন্ত অবস্থায় নয়’ (সীরাহ ছহীহাহ ১/১২৯)।
ভারতের উর্দু কবি আলতাফ হােসায়েন হালী (১৮৩৭-১৯১৪ খৃঃ) বলেন, হেরা থেকে নেমে জাতির কাছে এলেন এবং একটি পরশমণির টুকরা সাথে নিয়ে। এলেন' (মুসাদ্দাসে হালী ১৩ পৃঃ)।
নতুনের শিহরণ ও খাদীজার বিচক্ষণতা
নতুন অভিজ্ঞতায় শিহরিত মুহাম্মাদ (ছাঃ) দ্রুত বাড়ী ফিরলেন। স্ত্রী খাদীজাকে বললেন, শিগগীর আমাকে চাদর মুড়ি দাও। চাদর মুড়ি দাও। কিছুক্ষণ পর ভয়ার্তভাব কেটে গেলে সব কথা স্ত্রীকে খুলে বললেন। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে খাদীজা কেবল স্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাঁর নির্ভরতার প্রতীক ও সান্ত্বনার স্থল। ছিলেন বিপদের বন্ধ৷ তিনি অভয় দিয়ে বলে উঠলেন, এটা খারাব কিছুই হতে পারে না।
কখনােই না। আল্লাহর কসম! তিনি কখনােই আপনাকে অপদস্থ করবেন না। আপনি আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করেন, দুস্থদের বােঝা বহন করেন, নিঃস্বদের কর্মসংস্থান করেন, অতিথিদের আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করেন। বস্তুতঃ সে যুগে কেউ কোন মর্যাদাবান ব্যক্তিকে আশ্রয় দিলে তার উদ্দেশ্যে এরূপ প্রশংসাসূচক বাক্য বলা হত। যেমন বলেছিলেন সে সময় মক্কার নিম্নভূমি অঞ্চলের নেতা ইবনুদ দুগুন্না গােপনে হাবশায় গমনরত আবুবকর (রাঃ)-কে আশ্রয় দিয়ে ফেরার সময় (ইবনু হিশাম ১/৩৭৩)।
অতঃপর খাদীজা স্বামীকে সাথে নিয়ে চাচাতাে ভাই অরাক্কা বিন নওফালের কাছে। গেলেন। যিনি ইনজীল কিতাবের পণ্ডিত ছিলেন এবং ঐ সময় বার্ধক্যে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সব কথা শুনে বললেন, এ তাে সেই ফেরেশতা যাকে আল্লাহ মূসার প্রতি নাযিল করেছিলেন। হায়! যদি আমি সেদিন তরুণ থাকতাম। হায়! যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তােমার কওম তােমাকে বহিষ্কার করবে। একথা শুনে চমকে উঠে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওরা কি আমাকে বের করে দিবে’?
অরাক্বা বললেন,হা! তুমি যা নিয়ে আগমন করেছ, তা নিয়ে ইতিপূর্বে এমন কেউ আগমন করেননি, যার সাথে শত্রুতা করা হয়নি। অতঃপর অরাক্কা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন 'যদি তােমার সেই দিন আমি পাই, তবে আমি তােমাকে সাধ্যমত সাহায্য করব।
No comments