নবীজীর দাওয়াতে সমাজনেতাদের প্রতিক্রিয়া
সমাজনেতাদের প্রতিক্রিয়াহযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাওয়াতে সমাজনেতাদের প্রতিক্রিয়া
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আহ্বানের সত্যতা ও যথার্থতার বিষয়ে সমাজনেতাদের মধ্যে কোনরূপ দ্বিমত ছিল না। কিন্তু ধুরন্ধর নেতারা তাওহীদের এ অমর আহ্বানের মধ্যে তাদের দুনিয়াবী স্বার্থের নিশ্চিত অপমৃত্যু দেখতে পেয়েছিল।
এক আল্লাহকে মেনে নিলে শিরক বিলুপ্ত হবে। দেব-দেবীর পূজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সারা আরবের উপর তাদের ধর্মীয় নেতৃত্ব ও পৌরহিত্যের মর্যাদা শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া লােকেরা যে পূজার অর্ঘ্য সেখানে নিবেদন করে, তা ভােগ করা থেকে তারা বঞ্চিত হবে।
আল্লাহর বিধানকে মানতে গেলে তাদের মনগড়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধানসমূহ বাতিল হয়ে যাবে। ঘরে বসে দাদন ব্যবসার মাধ্যমে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিয়ে তারা যেভাবে জোকের মত গরীবের রক্ত শােষণ করছিল, তা বন্ধ হয়ে যাবে। যে নারীকে তারা কেবল ভােগের সামগ্রী হিসাবে মনে করে, তাকে পূর্ণ সম্মানে অধিষ্ঠিত করতে হবে। এমনকি তাকে নিজ কষ্টার্জিত সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিতে হবে।
কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের ‘ভাই' হিসাবে সমান ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা যুগ যুগ ধরে যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব তারা দিয়ে আসছিল, তা নিমেষে হারিয়ে যাবে এবং মুহাম্মাদকে নবী মেনে নিলে কেবল তারই আনুগত্য করতে হবে।
অতএব মুহাম্মাদ দিন-রাত কাবাগৃহে বসে ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকুক, আমরাও তার সাথী হতে রাযী আছি। কিন্তু তাওহীদের সাম্য ও মৈত্রীর আহ্বান আমরা কোনমতেই মানতে রাযী নই। এইভাবে প্রধানতঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের বিপরীত ধারণা করেই তারা রাসূল (ছাঃ)-এর
তােমাকে খুবই কষ্ট দেয়, তা আমরা জানি। তবে ওরা তােমাকে মিথ্যাবাদী বলে না। বরং যালেমরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে’ (আন'আম ৬/৩৩)। যুগে যুগে সকল নবী-রাসূল ও তাঁদের সনিষ্ঠ অনুসারীদের একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং হবে।
সম্প্রদায়ের নেতাদের মন্দ প্রতিক্রিয়ার অন্যতম কারণ ছিল গােত্রীয় হিংসা এবং ভালাের প্রতি হিংসা। যেমন অন্যতম নেতা আখনাস বিন শারী-এর প্রশ্নের উত্তরে আবু জাহল
সাথে আমাদের বংশ মর্যাদাগত ঝগড়া আছে।... তারা বলবে, আমাদের বংশে একজন নবী আছেন, যার নিকটে আসমান থেকে অহি’ আসে। আমরা কিভাবে ঐ মর্যাদায় পৌছৰ? অতএব আল্লাহর কসম! আমরা কখনােই তার উপর ঈমান আনব না বা তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব না।
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন ‘আব্দে মানাফের পুত্র হাশেম-এর বংশধর। পক্ষান্ত। রে আবু জাহল ছিলেন বনু মাখযুম গােত্রের। বনু হাশেম গােত্রে নবীর আবির্ভাব হওয়ায় বনু মাখযুম গােত্র তাদের প্রতি হিংসা পরায়ণ ছিল। যদিও সকলে ছিলেন কুরায়েশ বংশীয়।
উর্দু কবি হালী এই সময়কার অবস্থা বর্ণনা করেন নিম্নোক্ত ভাষায়
(১) এটি বজ্রের ধ্বনি ছিল, না পথ প্রদর্শকের কণ্ঠ ছিল, আরবের সমগ্র যমীন যা কাপিয়ে দিল।
(২) নতুন এক বন্ধন সকলের অন্তরে লাগিয়ে দিল, এক আওয়াযেই । ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে দিল।
(৩) সত্যের এ আহ্বানে সর্বত্র হৈ চৈ পড়ে গেল, সত্যের নামে ময়দান ও পাহাড় সর্বত্র গুঞ্জরিত হ’ল’ (মুসাদ্দাসে হালী উর্দু যষ্ঠপদী, ১৪ পৃঃ)।
ইবনু হিশাম ১/৩১৫-১৬; সনদ মুনত্ত্বাতি বা যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩০৪)। বায়হাবী, সালায়েলুন নবুঅত ২/২০৬; আল-বিদায়াহ ৩/৬৪।
No comments