Header Ads

Header ADS

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যৌবন কাল

নবুয়ত-পূর্ব জীবন


আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানত প্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতে যোগদান করেন এবং এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন। তরুণ বয়সে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তেমন কোন পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন । সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা'দ গোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অল্প সময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্তএবং সত্যবাদী। ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদীজা (র:) পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

 

খাদীজা (র:) মাইছারার মুখে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসায়ের সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদীজার (র:) বয়স ছিল ৪০ আর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বয়স ছিল ২৫; খাদীজার (র:) জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি। খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদের (সাঃ) ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম, যয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম', ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে এবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে।

 

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা'বা গৃহের পূনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল। যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.