রাসুল ( সঃ) এর মক্কা জীবন
রাসুল ( সঃ) এর মক্কা জীবন।
মক্কায় মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং স্থান
c . ৫৬৯ পিতা আবদুল্লাহ'র মৃত্যু
c . ৫৭০ জন্মের সম্ভাব্য সময়,
এপ্রিল ২০: মক্কা
৫৭০
আবিসিনীয় রাজা
আবরাহার মক্কার কাবা শরীফের উপর ব্যর্থ হামলা
৫৭৬ মাতা আমিনার মৃত্যু
৫৭৮ দাদা আবদুল মেত্তালেবের মৃত্যু
c . ৫৮৩ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে
সিরিয়ায় গমন
c . ৫৯৫ খাদিজার (রাঃ) সাথে বিয়ে
৬১০
কুরআনের প্রথম আয়াতের (সূরা আলাক : ১-৫) অবতরণ: মক্কা
c . ৬১০ নবী ও রাসূল হিসেবে আবির্ভাব: মক্কা
c . ৬১৩
প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত প্রদানের সূচনা: মক্কা
c . ৬১৪ অনুসারীদের একত্রিতকরণ: মক্কা
c . ৬১৫
আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) মুসলমানদের প্রথম
হিজরত
৬১৬ বনু হাশিম বংশের সকলকে একঘরেকরণ
c . ৬১৮মদীনায় গৃহযুদ্ধ: মদীনা
৬১৯
বনু হাশিম বংশকে একঘরে করে রাখার অবসান
c . ৬২০ মি'রাজ
৬২২ মদীনায় হিজরত
৬২৪ বদরের যুদ্ধ কুরাইশদের উপর মুসলমানদের বিজয়
৬২৫
উহুদের যুদ্ধ প্রথমে পরাজিত হয়েও বিজয়ীর বেশে মদীনায়
c . ৬২৫ বনু নাদির গোত্রকে নির্বাসিতকরণ
৬২৬ দুমাতুল জান্দালে আক্রমন: সিরিয়া
৬২৮ খন্দকের যুদ্ধ
৬২৭ বনু কুরাইজা গোত্রের ধ্বংস
c . ৬২৭
' বনি ক্বাব গোত্রকে বশীভূতকরণ: দুমাতুল জান্দাল
৬২৮ হুদাইবিয়ার সন্ধি
c . ৬২৮ ক্বাবা শরীফে প্রবেশাধিকার লাভ
৬২৮
খায়বারের যুদ্ধ ইহুদীদের উপর বিজয় লাভ
৬২৯ প্রথম উমরাহ
৬২৯
বাইজান্টাইন সম্রাজ্যের উপর আক্রমন:
মুতার যুদ্ধ
৬৩০ রক্তপাতহীনভাবে
মক্কা বিজয়
c . ৬৩০ হুনায়েনের যুদ্ধ
c . ৬৩০ তায়েফের যুদ্ধ তায়েফ অধিকার
৬৩০ আল্লাহ'র শাসন প্রতিষ্ঠা: মক্কা
c . ৬৩১
আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ এলাকা অধিকার
c . ৬৩২ রোম ও গাসসান আক্রমন:
তাবুকের যুদ্ধ
৬৩২ বিদায় হজ্জ্ব
৬৩২ মৃত্যু (জুন ৮): মদীনা
মূল নিবন্ধ: হিজরতের পূর্বে মুহাম্মাদ
হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মাদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান
গোপন প্রচার
প্রত্যাদেশ অবতরণের পর মুহাম্মাদ বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোন উপায় ছিলনা। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদের আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তার সহধর্মিণী
খাদিজা । এরপর মুসলিম হন মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তাঁর ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলামের বাণী পৌছে দেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন; এই সভায় কেউই তাঁর আদর্শ মেনে নেয়নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো
আলী। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধু
আবু বকর। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।
প্রকাশ্য দাওয়াত
তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। মুহাম্মাদ সাফা পর্বতের ওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, "আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল" । কিন্তু এতে সকলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায়।
মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন
মুহাম্মাদের বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে তাঁর উপর নির্যাতন শুরু করেঃ প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কুটতর্ক এবং বিপরীত যুক্তি। এগুলোতেও কাজ না হওয়াতে এক সময় ইসলামের প্রচারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং তা পরিচালনা করার নেয়ার জন্য একটি অপপ্রচার গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়। একই সাথে তৎকালীন আরব কবি ও চাটুকারদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় মনোরঞ্জক সাহিত্য ও গান-বাজনার দল, এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মাদের সাথে আপোষেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ তা মেনে নেননি; কারণ আপোষের শর্ত ছিল প্রচারবিহীনভাবে ইসলাম পালন করা অথবা বহুঈশ্বরবাদী পৌত্তলিকতাকে সমর্থন করে ইসলাম প্রচার করা, অথচ প্রতিমাবিহীন একেশ্বরবাদের দিকে মানুষকে ডাকাই ছিল তার ধর্ম প্রচারের সর্বপ্রথম ঐশী দ্বায়িত্ব।
ইথিওপিয়ায় হিজরত
ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবী কিছু সংখ্যক মুসলিমকে
আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ
এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল মুহাম্মাদের এর চাচা হামযা এবং কুরাইশ নেতা উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। মুহাম্মাদকে তাঁর চাঁচা হামজা খুব পছন্দ করতেন এবং তাকে নিজের সন্তানের মত স্নেহ করতেন। আবু জাহল কাবা প্রাঙ্গনে মুহাম্মাদের সাথে কঠোর ভাষায় বিরূপ আচরণ করেন। এ ঘটনা জানতে পেরে মুহাম্মাদের চাচা হামযা তাঁর প্রতিবাদস্বরূপ আবু জাহলকে মারধর করেন এবং মুহাম্মাদের সমর্থনে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়। আবু জাহলের সঙ্গী হিসেবে কুরাইশ বলশালী যুবক ওমরও মুসলিমদের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিতেন। মুহাম্মাদ সবসময় প্রার্থনা করতেন যেন আবু জাহল ও উমরের মধ্যে যেকোন একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। ওমরের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর এই প্রার্থনা পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে ওমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তাঁর ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবেচিত হচ্ছিল। তবুও ওমরের ইসলাম গ্রহণে মুসলিমদের আধিপত্য আরও মজবুত হয় এবং মুহাম্মদ সহ সকল মুসলিমগণ ওমরের কাছ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা দানের আশ্বাস পেয়ে তখন থেকে ওমরের সাথে কাবা প্রাঙ্গনে প্রকাশ্যে উপাসনা করা শুরু করেন।
একঘরে অবস্থা
এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছিল তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ ও তার অনুসারী সহ বনু হাশিম গোত্রকে একঘরে ও অবরোধ করে। তিন বছর অবরুদ্ধ থাকার পর তারা মুক্তি পায়।
দুঃখের বছর ও তাঈফ গমন
মুক্তির পরের বছর ছিল মুহাম্মাদের জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে মুহাম্মাদ মক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপরে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তাঈফ যান (তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে তাকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি; বরং সেখানেও তিনি ইসলাম প্রসারের সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।
মি'রাজ বা উর্দ্ধারোহন
ইসলামী ভাষ্যমতে মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত
মসজিদুল হারাম থেকে
জেরুজালেমে অবস্থিত
মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইসলামে ইসরা নামে পরিচিত। কথিত আছে, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এ সময় তিনি
বেহেশ্ত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা মুসলমানদের কাছে মি'রাজ নামে পরিচিত। ইসলামী সূত্রানুসারে এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ই অতিবাহিত হয়নি বলে ধারনা করা হয়|
No comments